ইসলামে কি দাস-দাসীদের চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় দেখা হয় ?

ইসলামে কি দাস-দাসীদের চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় দেখা হয় ? 


মূল আর্টিকেল লিংকঃ ইসলামে কি দাস-দাসীদের চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় দেখা হয় ? - Faith and Theology (faith-and-theology.com) 



ছবিতে দেওয়া ফিকহ আবু বকর এই গ্রন্থের ১০২ নং পৃষ্টার হাইলাইট করা অংশকে মুক্তমণা নাস্তিকরা তাদের ভিবিন্ন লাইভ ও ওয়েভসাইটে প্রচার করে যে, ইসলামে দাস-দাসীদের চতুষ্পদ জন্তুর মতো দেখা হয়। এবং হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু নাকি দাস-দাসীদের 'চতুষ্পদ জন্তু'রন্যায় বলেছে।   
   
ফিকহ আবু বকর এই গ্রন্থের লেখক, ড.মুহাম্মদ রাওয়াস কালা'জী, যার ওপর অপরাধ সংষটিত হয় এই টপিকে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে একটি রায় উদ্ধৃত করেছেন,  
"ক্রীতদাস হত্যার বিনিময়ে স্বাধীন ব্যক্তিকে হত্যা করা যাবে না।" 
রেফারেন্সঃ সুনানু বাইহাকী, ৮ম খন্ড, পৃ-২৫১। 

এই রেওয়াতের ব্যক্ষায় ড.মুহাম্মদ রাওয়াস কালা'জী উল্লেখ করেছেন যে, " দাস মর্যাদার দিক থেকে চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায়।" 
রেফারেন্সঃ ফিকহ আবু বকর; পৃষ্ঠা নং- ১০২
  
দাস মর্যাদার দিক থেকে চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় এটা লেখকের (ড.মুহাম্মদ রাওয়াস কালা'জী) মত।
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এই কথা বলেনি। বা, কুরআন হাদিসেও একথা উল্লেখ নেই। বরং এই মতের বিপক্ষে অসংখ্য রেফারেন্স দেওয়া যাবে যেখানে দাসদের স্বাধীন মানুষের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। দাস ও মনিবের সম্পর্ক থাকবে ভাইয়ের মতো। কেননা সকল মানব আল্লাহর দাস। তাই ইসলামে কাউকে দাস বলে সম্বোধন করাও হারাম।  

এছাড়া, ক্রীতদাস হত্যার বিনিময়ে স্বাধীন ব্যক্তিকে হত্যা করা যাবে নাকি যাবেনা, এটা এমন কোনো বিষয় নয় যে এই বিষয়ে সমস্ত আলেমগণ সর্বসম্মতিক্রমে একমত হয়েছেন।

আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তাআলা বলেন;
হে মু'মিনগণ! তোমাদের প্রতি নিহতদের কিসাস সম্পর্কে আদেশ দেয়া যাচ্ছে, স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন, গোলামের বদলে গোলাম এবং স্ত্রীলোকের বদলে স্ত্রীলোক, অতঃপর যাকে তার ভাইয়ের পক্ষ হতে কিছু অংশ মাফ করে দেয়া হয়, সে অবস্থায় যথাযথ বিধির অনুসরণ করা ও সততার সঙ্গে তার দেয় আদায় করা বিধেয়, এটা তোমাদের প্রভুর পক্ষ হতে ভার লাঘব ও অনুগ্রহ,এরপর যে কেউ বাড়াবাড়ি করবে, তার জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। 

উক্ত আয়াতেরে তাফসিরে, 'তাফসীরে তাবারি"তে উল্লেখ করা হয়ছে, 
আবু তালিব (রা.) আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন, যে কোনো স্বাধীন ব্যক্তি যদি কোনো কৃতদাসকে হত্যা করে তবে সে তার কিসাস হবে। যদি দাসের মনিবগণ ইচ্ছা করেন তাকে হত্যা করবে। 
রেফারেন্সঃ তাফসীরে তাবারী; ৩য় খন্ড পৃষ্টা নং-১৬৩ 

উক্ত আয়াতে তাফসীরে ইবনে কাছিরেও উল্লেখ করা হয়ছে, 
ইমাম আবু হানীফা (রঃ), ইমাম সাওরী (রঃ), ইমাম আবু লায়লা (রঃ) এবং ইমাম আবু দাউদ (রঃ)-এর মাযহাব এই যে, "কোন আযাদ ব্যক্তি যদি কোন গোলামকে হত্যা করে তাবে তার পরিবর্তে তাকেও হত্যা করা হবে।" 
হযরত আলী(রাঃ), হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ),হযরত সাঈদ বিন যুবাইর (রঃ), হযরত ইব্রাহীম নখঈ (রঃ), হযরত হাকাম (রাঃ)-এরও এই মাযহাব।
হযরত ইমাম বুখারী (রঃ), হযরত আলী বিন মাদীনী (রঃ), হযরত ইবরাহীম নাখঈ (রঃ)-এরও একটি বর্ণনা অনুসারে হযরত সাওরী (রঃ)-এরও মাযহাব এটাই যে, যদি কোন মনিব তার গোলামকে হত্যা করে তবে তার পরিবর্তে মনিবকেও হত্যা করা হবে। এর দলীল হিসেবে তারা একটি হাদিস উল্লেখ করেন, " যে ব্যক্তি তার গোলামকে হত্যা করবে আমরাও তাকে হত্যা করবো, যে গোলামের নাক কেটে নেবে আমরাও তার নাক কেটে নেবো।" 

ইসলাম পূর্ব যুগে দাস-দাসীদের সাথে পশুর ন্যায় আচরণ করা হতো। বনের হিংস্র পশু ও মারাত্মক অপরাধীদের সাথে লড়াই করতে বাধ্য করা হতো। তরবারী দিয়ে দাসদের মধ্যে প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হতো। এবং সেই প্রতিযোগিতায় দাসদের মনিবগণ সমবেত হয়ে নিজ নিজ দাসের তরবারি আক্রমন প্রতিযোগিয়া উপভোগ করতো। প্রতিযোগিরা একে অপরকে হত্যা করলে চারদিকে অট্রহাসি ছড়িয়ে পড়ত। এই বিষয়ে "ইসলাম ও দাসপ্রথা" আর্টিকেলে আলোচনা ও রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে। 
কিন্তু ইসলাম একমাত্র ধর্ম যেখানে দাসপ্রথাকে সংস্কার করেছে। এইসব সংস্কার এতই মৌলিক ছিলো, যার পরিণতিতে দাসপ্রথা ক্রমে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। দাস-দাসীদের দিয়েছে পূর্ণ সম্মান। দিয়েছে স্বাধীন ব্যক্তির মর্যাদা। ইসলামে স্বাধীন ব্যক্তি ও দাস-দাসীদের মধ্যে কোনো পার্থ্যক্য নেই।

আবূ হুরাইয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন ‘আমার দাস ও আমার দাসী’ না বলে এবং অধীনস্থরাও যেন ‘আমার রব, আমার রাব্বাতী’ না বলে। বরং মনিব তার দাসকে বলবে, ফাতায়া ও ফাতাতী (আমার যুবক ও আমার যুবতী)। আর অধীনস্থ লোকেরাও বলবে, আমার সাইয়িদ আমার সাইয়িদাহ (আমার নেতা ও আমার নেত্রী)। কেননা তোমরা সবাই গোলাম। মহান আল্লাহই হলেন একমাত্র রব। 

রেফারেন্সঃ সুনানে আবু দাউদ; হাদিস নং- ৪৯৭৫

 

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের দাস-দাসীর মধ্যে যারা তোমাদেরকে খুশি করে তাদেরকে তোমরা যা খাও তা-ই খেতে দাও এবং তোমরা যা পরিধান করো তাই পরতে দাও। আর যেসব দাস তোমাদের খুশি করে না তাদেরকে বিক্রি করো। তোমরা আল্লাহর সৃষ্টিজীবকে শাস্তি দিও না। 

রেফারেন্সঃ সুনানে আবু দাউন; হাদিস নং- ৫১৬১ 

আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, 

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "তোমাদের কেউ যেন [এভাবে সম্বোধন কিরে] না বলে, 'তোমার প্রভুকে খাওয়াও', 'তোমার প্রভুকে অযু করাও', 'তোমার প্রভুকে পান করাও', বরং বলবে, 'আমার মুনিব (সাইয়্যিদ)' বা 'আমার অভিভাবক (মাওলা)'। আর তোমাদের কেউ যেন না বলে 'আমার দাস/বান্দা (আবদ)' বা 'আমার দাসী/বান্দী (আমাত)'; বরং বলবে 'আমার বালিকা (ফাতাত)' এবং 'আমর বালক (গুলাম)'। 

রেফারেন্সঃ সহিহ বুখারী, হাদিস নং- ২৫৫২; ইংরেজি অনুবাদ; ভলি ৩; বুক ৪৬।
 
আবু মুসা (রাঃ) হতে বর্ণিত; 
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইই ওয়া সাল্লাম বলেন, যার একটি ক্রীতদাসি আছে আর এ তাকে শিক্ষাদীক্ষা দান করে, তার সাথে সদয় ব্যাবহার করে, অতঃপর তাকে মুক্ত করে বিবাহ করে সে দ্বিগুণ সওয়াব পাবে। 
রেফারেন্সঃ সহিহ বুখারি; হাদিস নং- ২৫৮৪; ইংরেজি অনুবাদ, ভলি-৩ 

মুক্তমণা নাস্তিকরা একটা হাদিসের মাত্র একটা শব্দ বা লাইন দেখিয়ে এই অভিযোগগুলো করে! অথচ বাস্তবতার সাথে এসবের কোনো মিল নেই! ইসলামে দাস-দাসীদের এতো এতো সম্মান, সুযোগ সুবিধা দেওয়ার পরেও তারা এসব নিয়ে কিছু বলবেনা। 






 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url