উত্তাল সমুদ্রে কেউ নাস্তিক হয় না।

উত্তাল সমুদ্রে কেউ নাস্তিক হয়না।

লেখাটি রাফান আহমেদ এর 'অবিশ্বাসী কাঠগড়াই' বই থেকে নেওয়া হয়েছে।

বিপদের মুহুর্তে, ব্যক্তিগত ক্রাইসিস বা ট্র্যাজেডিতে স্রস্টার নিকট প্রার্থনা করে!

এই প্রসঙ্গে একটা ঘটনা উল্লেখ করার লোভ সামলাতে পারছিনা।

কথাসাহিত্যিক ড.মোহিত কামাল মানব মনের গতিপ্রকৃতি গ্রন্থে নাস্তিক লেখিকা তসলিমা নাসরিনের সাথে এক ভ্রমণের স্মৃতিচারণ করেছেন। তার স্মৃতির পাতায় পাওয়া যায়:

"শক্তিমান লেখিকা তসলিমা নাসরিনের সঙ্গে একবার সমুদ্র পেরিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপ যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল আমার। ফিরে আসার সময় হঠাৎ করেই বাতাসের গতি বেড়ে গেল। ঢেউ হলো এলোমেলো, বিক্ষিপ্ত। বোটের উভয় পাশ থেকে পানি ছিটকে এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে আমাদের।


তসলিমা নাসরিন হঠাৎ হঠাৎ চিৎকার দিয়ে বলছে, ' আল্লা গো! মরে যাবো নাকি! মা গো! একি! একি! '


বিপদে পড়লে মানুষ তার প্রিয়তম মানুষটির কথা স্মরণ করে,ছোট শিশুর মতো আচরণ করে কিংবা সবচেয়ে ক্ষমতাধর নির্ভরশীল কারো কাছ থেকে সাহায্য প্রার্থনা করে। কোনও বিকৃত ছাড়াই  তার অবচেতন মন মনের চিরন্তন সত্যের প্রকাশ ঘটে। তসলিমা নাসরিনের অবচেতন চিন্তাধারা থেকেও সৃষ্টিকর্তার প্রতি প্রচ্ছন্ন অনূভুতি ওই সময়ে বেরিয়ে এসেছে।


তসলিমা নাসরিনের যুক্তিবাদী কলম ঘোষণা করেছে, বুদ্ধি হওয়ার পর কখনো আল্লাহ নামটি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেননি, তিনি নাস্তিক। বিজ্ঞানমনস্ক তসলিমা নাসরিন কি জেনেটিক 'কোড' অস্বীকার করছেন না!


সমুদ্রে বিপৎসংকুল পরিস্থিতিতে আমার মনে হয়েছে নাস্তিক্যবাদ তার শক্তিমান কলমের ডগা থেকে নিঃসৃত শব্দমালার শৈল্পিক কারুকাজ মাত্র, অন্তরের গভীর থেকেও উথিত অনুভূতির পুরোপুরি বহিঃপ্রকাশ নয়। অতলে নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভালোবাসার বোধ জমাট বেঁধে আছে, সময় ও সুযোগ তার বিচ্ছুরণ ঘটাইবেই।


[রেফারেন্সঃ ড.মোহিত কামাল,মানব মনের গতিপ্রকৃতি ; পৃ ৭১-৭২ ]


জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের কলমে পাওয়া যায় :

"আমি একজন ঘোর নাস্তিককে চিনতাম, তর ঠোঁটে একবার একটা গ্রোথের মতো হলো। ডাক্তাররা সন্দেহ করলেন ক্যানসার। সঙ্গে সঙ্গে সেই নাস্তিক পুরোপুরি আস্তিক হয়ে গেলেন। তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যান।

বায়োপসির পর ধরা পড়ল গ্রোথের ধরণ খারাপ নয়। লোকালাইডজ গ্রোথ। ভয়ের কিছু নেই।অপারেশন করে ফেলে দিলেই হবে। সঙ্গে সঙ্গে ভদ্রলোক আবার নাস্তিক হয়ে পড়লেন। ভয়াবহ ধরনের নাস্তিক।


[রেফারেন্সঃ হুমায়ুন আহমেদ, ছায়া সঙ্গী ; পৃ.২১ ]


সুতরাং বোঝা যাচ্ছে বিপদ-আপদের চরম কোনো মুহূর্ত পর্দা সরিয়ে ফিতরাহ্ ( স্রষ্টার অস্তিত্বেকে জানার,তাঁকে চেনার ও মেনে চলার সহজাত অনুভূতিকে ফিতরাহ্ বলে) কে উন্মোচন করতে পারে। সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, মৃত্যু চিন্তা নাস্তিকদের অবচেতন মনে স্রস্টার প্রতি থাকা বিশ্বাসকে বাড়িয়ে দেয়।


[রেফারেন্সঃJonathon Jong, Foxhole Atheism, Revisited: The Effects of Morality Salience on Explicit and Implicit Religious Belief ; Journal of Experimental Social Physchology, Vol 48,Issue 5, P.983-989 ]


বাইরে বাইরে যতই বিপক্ষে বলুক কথা বলুক না কেন,গবেষণায় এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে,তাদের অবচেতন মনে স্রস্টা ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস জমাট বেঁধে আছে।


[রেফারেন্সঃ Nathan Heflick, Ph.D,Do Atheist Implicitly Blive in God and life After Death! Psychology Today,May 05,2011 ]


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url