আর্গুমেন্ট ফর গড
আর্গুমেন্ট ফর গড
লিখেছেনঃ সাজ্জাতুল মাওলা শান্ত।
* The cosmological argument: ( বিশ্বতত্ব বিষয়ক যুক্তি )
* The Moral argument.( নৈতিক যুক্তি ):
লিখেছেনঃ সাজ্জাতুল মাওলা শান্ত।
যে আর্গুমেন্ট গুলো আলোচনা করা হবে।
* The cosmological argument.( বিশ্বতত্ব বিষয়ক যুক্তি )
* The Ontological argument. ( তত্ত্ব বিষয়ক যুক্তি )
* The Teleological argument. ( উদ্দেশ্যবাদ বিষয়ক যুক্তি )
* The Moral argument. The Moral argument.( নৈতিক যুক্তি
* The Ontological argument. ( তত্ত্ব বিষয়ক যুক্তি )
* The Teleological argument. ( উদ্দেশ্যবাদ বিষয়ক যুক্তি )
* The Moral argument. The Moral argument.( নৈতিক যুক্তি
* Argument from Dependency ( নির্ভরতা যুক্তি )
* The cosmological argument: ( বিশ্বতত্ব বিষয়ক যুক্তি )
কসমোলজকিক্যাল আর্গুমেন্ট অনুসারে প্রত্যেক কার্যের কারণ আছে। অর্থাৎ অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আসতে হলে তার পিছনে আবশ্যই একটা কারণ থাকতে হবে, সেক্ষেত্রে সৃষ্ট হওয়া সবকিছুর যদি কারণ থাকে তাহলে কারণেরও কারণ আছে। তবে এই কার্য থেকে কারণ সম্পর্ক হিসেব করতে করতে আমাদের চিন্তাধারা ক্রমান্বয়ে পিছনের দিকে যেতে পারেনা। কেননা তখন "অনবস্থা দোষ"( infinite regress ) দেখা দিবে। যদি "অনবস্থা দোষ"( infinite regress ) দেখা যায় তাহলে কখনোই বর্তমানে আসা সম্ভব না।
উদাহারণ স্বরূপ, এই ইউনিভার্স যদি "X" হয়, আর একে সৃষ্টি করে থাকে "X1", আবার "X1" কে যদি সৃষ্টি করে "X2" আর এইভাবে যদি অনন্তকাল চলতে থাকে তাহলে "X" কখনোই অস্তিত্বে আসতে পারবে ? না কখনোই পারবেনা !
কেননা "X" অস্তিত্বে আসার জন্য নির্ভর করে "X1"এর উপর, আবার "X1" অস্তিত্বে আসার জন্য নির্ভর করে "X2"এর উপর এবং এভাবে অনন্তকাল চলতে থাকে। "X" অস্তিত্বে আসার জন্য নির্ভর করে অনাদিকাল ধরে চলা সৃষ্ট কিছুর উপর তাহলে বর্তমানে আসা সম্ভব না।
সুতরাং, ইউনিভার্স সৃষ্টির কারণ যদি সৃষ্টিকর্তা হয় তাহলে সৃষ্টিকর্তার জন্য অসীম সংখ্যক কারণের প্রয়োজন নেই। বরং শুরুতে এমন একজন স্রষ্টা আছে যার পিছনে আর কোনো স্রষ্টা নেই।
এছাড়া, Low of parsimony ( মিতব্যয়িতা নিয়ম ) অনুসারে, একই জিনিসের একটি মাত্র কারণ থাকা সম্ভব। তাহলে এই ইউনিভার্সের একটি মাত্র কারণ থাকা সম্ভব। এবং সেই কারণই হলো সৃষ্টিকর্তা।
* The Ontological argument ( তত্ত্ব বিষয়ক যুক্তি ):
তত্ত্ব বিষয়ক যুক্তু অনুসারে সৃষ্টিকর্তার ধারণা থেকেই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণ পাওয়া যায়। এই তত্ত্বটি অবতারণা করেন দার্শনিক সেন্ট আনসেলম। তার মতে আমাদের মনে একটা পূর্ণসত্তার ধারণা আছে। তাই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব আছে। কেননা অস্তিত্ব ছাড়া সত্তা পূর্ণ হতে পারেনা।
পাশ্চাত্যের আধুনিক দার্শনের জনক রেনে ডেকার্ট তার যুক্তি সমর্থন দিয়ে বলেন,
আমাদের মনে এক অসীম সত্তার ( infinite being ) ধারণা আছে। ডেকার্ট এর মতে ধারণা বা theory of idea তিন প্রকার।
1. Adventitious idea. (আগুন্তক ধারণা )
2.Factitious idea. ( কৃত্রিম ধারণা )
3.Innates idea. ( সহজাত ধারণা )
Adventitious idea. (আগুন্তক ধারণা ): যে ধারণা ইন্দিয়ের মাধ্যমে বাহ্য জগত থেকে মনো জগতে আসে তাকে Adventitious idea বা আগুন্তক ধারণা বলে।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, আমারা যা কিছু দেখি, শুনি, বা পঞ্চইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে যে ধারণা অর্জন করি তাই আগুন্তক ধারণা।
Factitious idea. ( কৃত্রিম ধারণা ): বিভন্ন ধারণা থেকে পাওয়া ধারণার সম্বনয়ে যে ধারণা অর্জিত হয় তাকে কৃত্রিম ধারণা বলে।
যেমন, আমরা পাখিকে আকাশে উড়তে দেখি। আবার ঘোড়াকে দৌড়াতে দেখি। পাখির আকাশে উড়া, ঘোড়ার দৌড়ানো এগুলো থেকে আমরা 'পঙ্খীরাজ ঘোড়া' আবিষ্কার করতে পারি। সুতরাং কৃত্রিম ধারণার জন্য কিছু একটা অবশ্যই বাস্তবে থাকতে হবে। যেমন, পঙ্খীরাজ ঘোড়া আবিষ্কার করার জন্য 'ঘোড়া' এবং 'পাখিকে' বাস্তবে থাকা প্রয়োজন।
Innates idea. ( সহজাত ধারণা ): যে ধারনা প্রাকৃতিক ভাবে আমাদের মধ্যে থাকে। যেমন, সংখ্যা, রেখা, অসীম, সৃষ্টিকর্তা।
সৃষ্টিকর্তা যদি নাই থাকে তাহলে সৃষ্টিকর্তার ধারণা কেন আসলো ?
নাস্তিকদের দাবী মতো সৃষ্টিকর্তা যদি কেবলই আমাদের চিন্তা বা ধারণা হলে সৃষ্টিকররা হচ্ছে কৃত্রিম ধারণা। কিন্তু কৃত্রিম ধারণা তৌরি হতে হলে একটা কিছুকে বাস্তবে থাকতে হবে।
সুতরাং সৃষ্টিকর্তা আছে বলেই আমরা সৃষ্টিকর্তার ধারনা পাচ্ছি। সৃষ্টিকর্তার বিশ্বাস প্রাকৃতিক, এবং নাস্তিকতা হচ্ছে অপ্রাকৃত।
সৃষ্টিকর্তার বিশ্বাস প্রাকৃতিক এটা বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত। প্রত্যেক মানুষই সৃষ্টিকর্তার আস্তিত্বে স্বাভাবিক অনুভূতি নিয়ে জন্মগ্রহন করে। ইসলামি পরিভাষায় এটাকে "ফিতরাহ" বলা হয়।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন,
কাজেই দ্বীনের প্রতি তোমার মুখমন্ডল নিবদ্ধ কর একনিষ্টভাবে। এটাই আল্লাহ প্রকৃতি, যে প্রকৃতি তিনি মানুষকে দিয়েছেন, আল্লাহর সৃষ্টি কার্যে কোন পরিবর্তন নেই, এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।
রেফারেন্সঃ সূরা আর-রুম; ৩০ঃ৩০
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ প্রত্যেক নবজাতকই ফিত্রাতের উপর জন্মলাভ করে। অতঃপর তার পিতামাতা তাকে ইয়াহূদী, নাসারা বা মাজূসী (অগ্নিপূজারী) রূপে গড়ে তোলে। যেমন, চতুষ্পদ পশু একটি পূর্নাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে কোন (জন্মগত) কানকাটা দেখতে পাও? অতঃপর আবূ হুরায়রা তিলাওয়াত করলেনঃ (فِطْرَةَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ) (যার অর্থ) “আল্লাহর দেয়া ফিত্রাতের অনুসরণ কর, যে ফিত্রাতের উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, এটাই সরল সুদৃঢ় দ্বীন”- (সূরা রুমঃ ৩০)।
রেফারেন্সঃ সহীহ বুখারি; হাদিস নং- ১৩৫৯
University of Oxford এর Centre for Anthropology and mind বিভাগের সিনিয়র রিসার্চার Dr. Justin Berrett দীর্ঘ ১০ বছর শিশুদের উপর বৈজ্ঞানিক গবেষণা করে বলেছেনঃ "Human beings are natural believers in God." অর্থাৎ, মানুষ স্বভাবতই ঈশ্বরে বিশ্বাসী।
অর্থাৎ, ঈশ্বরে বিশ্বাস শেখানো হয় না কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই বিকশিত হয়।
সহজাত ধারণার স্বীকারোক্তি পাওয়া যায় আলোচিত নাস্তিক রিচার্ড ডকিন্সের মুখেও। জন লেনক্সের সাথে এক বিতর্কে ডকিন্স সহজাত ধারণার কথা বলে। রেফারেন্সঃ
* The Teleological argument. ( উদ্দেশ্যবাদ বিষয়ক যুক্তি ):
এই আর্গুমেন্ট অনুসারে, জগতের নিয়ম, শৃঙ্খলা ও বস্তুবিন্যাস ইত্যাদি প্রমাণ করে যে, জগৎ এক বিশেষ উদ্দেশ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই নিয়ম বা শৃঙ্খলার পরিকল্পনাকারী বা ডিজাইনার হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা।
* The Moral argument.( নৈতিক যুক্তি ):
জীবন ধারণের জন্য নৈতিকতা অপরিহার্য। আমরা সব সময় ভালো ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ভালো ও মন্দ নির্ণয় করবে কে?
নৈতিক মানদন্ড যদি মানুষ নির্ধারণ করে তাহলে নৈতিকতার কোনো মানদন্ড থাকবেনা। যেমনঃ কোনো সমাজে যদি মানুষ হত্যা করাকে নৈতিক মনে করে বা ধর্ষণ করাকে নৈতিক মনে করে তাহলে সেই সমাজে মানুষ হত্যা করা এবং ধর্ষণ করাটা নৈতিক বলে গণ্য হবে।
অন্যদিকে, নৈতিকতা যদি অব্জেক্টিভ হয় তাহলে, কোনটা নৈতিক আর কোনটা অনৈতিক সেটা কোনো ব্যক্তির উপর নির্ভর করবেনা। পৃথিবীর সকল মানুষ যদি একমত হয় যে হত্যা করা, ধর্ষণ করা ভালো তবুও এটি মন্দ বলে বিবেচিত হবে। নৈতিকতা যদি বক্তি নির্ধারণ করে তা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করবে। মানুষ যখন নিজের নৈতিকতা নির্ধারণ করবে, তখন প্রশ্ন আসবে অন্য মানুষ কি সেটা মানতে বাধ্য? অবশ্যই না!
যদি বলা হয় আইন না মানলে রাষ্ট্র থেকে শাস্তি প্রধান করা হবে তাই মানুষের তৈরি মানদন্ড অন্য মানুষকেও মানতে হবে। কিন্তু কেউ যদি আইনকে কোনোভাবে ফাঁকি দিতে পারে বা আইনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সে ক্ষেত্রে এই যুক্তি গ্রহণ করা যাবেনা। আইনকে টাকা দিয়ে কিনে নেওয়া এমন ঘটনার প্রমাণ ইতিহাসে হাজার হাজার আছে।
কেউ যদি কয়েকশত মানুষকে হত্যা করে আইনকে ফাঁকি দিয়ে মারা যায় তাহলে তার শাস্তি কি হবে?
সুতরাং মানুষ কখনোই নিজের নৈতিকতা নির্ধারণ করতে পারেনা।
নৈতিকতা নির্ধারক হতে হলে, তার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। পার্থিব জীবনে ও মৃত্যুর পরেও তার ক্ষমতা থাকতে হবে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো একমাত্র সৃষ্টিকর্তার আছে। তাই নৈতিকতার নির্ধারণের জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন অপরিহার্য।