ইসলাম তো নারীদের মহান মর্যাদা দেয়! তাহলে ইসলাম কেন স্ত্রী প্রহারের নির্দেশ দিয়েছে?

ইসলাম তো নারীদের মহান মর্যাদা দেয়!  তাহলে ইসলাম কেন স্ত্রী প্রহারের নির্দেশ দিয়েছে। 

লিখেছেনঃ সাজ্জাতুলমাওলা শান্ত



পুরুষগণ নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের এককে অন্যের উপর মর্যাদা প্রদান করেছেন, আর এজন্য যে, পুরুষেরা স্বীয় ধন-সম্পদ হতে ব্যয় করে। ফলে পুণ্যবান স্ত্রীরা (আল্লাহ ও স্বামীর প্রতি) অনুগতা থাকে এবং পুরুষের অনুপস্থিতিতে তারা তা (অর্থাৎ তাদের সতীত্ব ও স্বামীর সম্পদ) সংরক্ষণ করে যা আল্লাহ সংরক্ষণ করতে আদেশ দিয়েছেন। যদি তাদের মধ্যে অবাধ্যতার সম্ভাবনা দেখতে পাও, তাদেরকে সদুপদেশ দাও এবং তাদের সাথে শয্যা বন্ধ কর এবং তাদেরকে (সঙ্গতভাবে) প্রহার কর, অতঃপর যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়, তাহলে তাদের উপর নির্যাতনের বাহানা খোঁজ করো না, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বোচ্চ, সর্বশ্রেষ্ঠ।
রেফারেন্সঃ সূরা নিসা; ৪ঃ৩৪

মুক্তমণা নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষীদেরদের খুবই প্রিয় ও মুখরোচক একটি অভিযোগ যে, ইসলামে নারীদের প্রহার করার নির্দেশ দেই। তার রেফারেন্স  হিসেবে সূরা নিসা ৪নং আয়াতটিকে ব্যাবহার করে। 

চলুন দেখে নেওয়া যাক, নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষীদেরদের অভিযোগের সত্যতা কতটুকু। 


উক্ত আয়াতের প্রথম অংশে স্পষ্ট বুঝা যায়, পুরুষেরা নারীদের উপর কৃত্তশীল এবং নারীর ভরণপোষনের দায়িত্ব পুরুষের,নারীর দেখাশুনার দায়িত্ব পুরুষের, পরিবারের বরণ-পোষনের দায়িত্ব পুরেষের মানে পুরো অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি পুরুষকে দেওয়া হয়েছে।


যেহেতু সকল  পরিবারের সকল যাবতিয় প্রয়োজন মিটানোর দায়িত্ব পুরুষের তাই তারাই পরিবারের কর্তা হবে। এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। এছাড়া নারীরা শারীরিকভাবে পুরুষদের চেয়ে দুর্বল হয়। কর্মদক্ষতা ও কর্ম ধারাবাহিকতায় শারীরিকভাবে পুরষেরা নারীদের চেয়ে বেশি অ্যাডভান্টেজ পাই। বিশেষ বিশেষ সময়ে যেমন, পিরিয়ডের সময়ে,প্রেগন্যান্সির সময়ে,মেনোপোজের পর নারীর কর্মদক্ষতা  হ্রাস পাই। তখন স্বাভাবিকভাবেই নারীর পরনির্ভরশীলতা চলে আসে। যেটা পুরুষের ক্ষেত্রে হয় না । 

তাই পরিবারের কর্তা পুরুষ হবে এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্ত তার মানে এই না যে পুরুষ ও নারীর মধ্যে মর্যাদার কোন পার্থক্য থাকবে ; বরং দুটি ন্যায়সঙ্গত ও তাৎপর্যের প্রেক্ষিতেই পুরুষদেরকে নারীদের পরিচালক নিযুক্ত করা হয়েছে।


আয়াতের দ্বিতীয় অংশে আল্লাহ বলেছেন,


ফলে পুণ্যবান স্ত্রীরা (আল্লাহ ও স্বামীর প্রতি) অনুগতা থাকে এবং পুরুষের অনুপস্থিতিতে তারা তা (অর্থাৎ তাদের সতীত্ব ও স্বামীর সম্পদ) সংরক্ষণ করে যা আল্লাহ সংরক্ষণ করতে আদেশ দিয়েছেন।

অর্থাৎ,নারীর উপর কর্তব্য হচ্ছে, আল্লাহ তাকে তার স্বামীর যা আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছেন তার আনুগত্য করা। আর সে আনুগত্য হচ্ছে, সে স্বামীর পরিবারের প্রতি দয়াবান থাকবে, স্বামীর সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে। স্বামীর পক্ষ থেকে খরচ ও কষ্ট করার কারণে আল্লাহ স্বামীকে স্ত্রীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন। [ তাফসিরে তাবারী ] 


আয়াতের তৃতীয় অংশে আল্লাহ বলেছেন, 


আর স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশংকা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, তারপর তাদের শয্যা বর্জন কর এবং তাদেরকে প্রহার কর । 


সতরাং এই আয়াত থেকে বুঝা যাচ্ছে, যেসব স্ত্রী অবাধ্য হয়ে যায়, আন্যায় কাজে লিপ্ত হয়ে যায় তাদের কে সংশোধনের জন্য পুরুষদেরকে তিনটি উপায় বাতলে দিয়েছেন।


প্রথমতঃ সদুপদেশ ও নসীহতের মাধ্যমে বুঝাতে হবে। 


দ্বিতীয়তঃ সাময়িকভাবে তার সংগ থেকে পৃথক হতে হবে। যাতে করে স্ত্রী তার স্বামীর অসন্তুষ্টি উপলব্ধি করে নিজের ভুল বুঝতে পারে ও তার ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়।


তৃতীয়তঃ তারপর যদি তাতেও সংশোধন না হয়, তবে মৃদুভাবে মারবে, তিরস্কার করবে। আর তার সীমা হল এই যে, শরীরে যেন সে মারধরের প্রতিক্রিয়া কিংবা যখম না হয়।

সুতরাং, স্ত্রী যদি অবাধ্য হয়ে যায়, তাকে বুঝানোর পরে, বিছানা পরিবর্ততনের পরেও যদি অবাধ্য থেকে যায় তখন তাকে  মৃদুভাবে  প্রহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সেখানে শর্ত দেওয়া হয়েছে যে শরীরে যেন সে মারধরের প্রতিক্রিয়া কিংবা যখম না হয়, স্ত্রিকে গালাগালি করা যাবেনা। [ তাফসিরে ইবনে কাসীর  ]


তাফসিরে আহসানুল বায়ানে এই আয়াতের ব্যখাই বলেছে ,প্রহার যেন হিংস্রতা ও অত্যাচারের পর্যায়ে না পৌঁছে ।


যেহেতু স্ত্রীর দেখাশুনা, বরণ-পোষণের দায়িত্ব পুরুষের সেহেতু স্ত্রীর অভিভাবক হচ্ছে তার স্বামী। পরিবারের কোনো সদস্যের কারনে যদি পরিবারের ব্যালেন্স নষ্ট হয় তাহলে কর্তা তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিবে এটাই সাবাভিক। কিন্তু এখানে নাম মাত্র ব্যবস্থা গ্রহন করার কথা বলা হয়েছে। স্বাভাবিক  অবস্থাই স্ত্রীর গায়ে হাত তোলার কথা বলেনি। 

কিন্তু এই পর্যায়ের শাস্তি দানকেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পছন্দ করেননি, বরং তিনি বলেছেনঃসুতরাং যারা স্ত্রীদেরকে প্রহার করে তারা তোমাদের মধ্যে উত্তম নয়।

রেফারেন্সঃ আবু দাউদ; হাদিস নং ২১৪৬, ইবন মাজাহ; হাদিস নং ১৯৮৫ 

                                                                                                                                     রাসুল্লাহ (সঃ) তিনি এই কাজ কখনো কাউকে আঘাত করেননি, কোন নারীকেও না, খাদিমকেও না করেনি। 

রেফারেন্সঃ সহীহ মুসলিম; হাদিস নং ৫৯৪৪



প্রশ্ন আসতে পারে যদি কর্তার কারণে পরিবারের ব্যালেন্স নষ্ট হয় তাহলে কি ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে ?

 

আয়াতের শেষ অংশে আল্লাহ বলেছে তোমাদের অনুগত হয়, তাহলে তাদের উপর নির্যাতনের বাহানা খোঁজ করো না । 

অর্থাৎ, কর্তৃত্ব পেয়েছ বলে বাড়াবাড়ি করোনা। 


এছাড়া হাদিসে উল্ল্যেখ আছে,   

ঈমানে পরিপূর্ণ মুসলমান হচ্ছে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি। যেসব লোক নিজেদের স্ত্রীদের নিকট উত্তম তারাই তোমাদের মধ্যে অতি উত্তম।

রেফারেন্সঃ আত-তিরমিজি; হাদিস নং ১১৬২

সুতরাং, সদাচারী এবং স্ত্রী-পরিবারের প্রতি কোমল, নম্র, অনুগ্রহশীল হওয়া ঈমানের পূর্ণতার শর্ত। কোন পুরুষ যদি উত্তম হতে চায় তাকে অবশ্যই তার স্ত্রীর কাছে উত্তম হতে হবে।



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url