পৃথিবীর আকৃতি নিয়ে কোরআন ও বিজ্ঞান কি সাংঘর্ষিক ? “দাহাহা” শব্দের অর্থ কি ?
পৃথিবীর আকৃতি নিয়ে কোরআন ও বিজ্ঞান কি সাংঘর্ষিক ? “দাহাহা” শব্দের অর্থ কি ?
وَالۡاَرۡضَ بَعۡدَ ذٰلِكَ دَحٰٮهَا
অতঃপর তিনি জমিনকে বিস্তীর্ণ করেছেন।
রেফারেন্সঃ সূরা আন নাযিয়াতঃ 79-30
অতঃপর তিনি জমিনকে বিস্তীর্ণ করেছেন।
রেফারেন্সঃ সূরা আন নাযিয়াতঃ 79-30
এই আয়াতে دَحٰٮهَا দাহাহা শব্দ দিয়ে কি পৃথিবীর আকৃতি উট পাখির ডিমের মত বুঝানো হয়েছে? নাকি পৃথিবীকে বিস্তীর্ণ করেছে, বা প্রসারিত করা হয়েছে বুঝিয়েছে ?
পবিত্র কুরআনের এই আয়াত দেখে অনেকেই মনে করে এই আয়াতে আল্লাহ বলেছে পৃথিবী সমতল। কিন্তু বিজ্ঞান এখন বলে পৃথিবী গোলাকার ।
তাহলে কি কোরআনে বৈজ্ঞানিক ভুল আছে! নাউজুবিল্লাহ।
আগের তাফসীর গুলোতে এই আয়াতের ব্যখ্যা দিতে গিয়ে বলেছে,
“ জমিনকে বিস্তীর্ণ করেছে ”বলতে বুঝানো হয়েছে যে ,জমিনকে আমাদের বসবাসের উপযোগী করা হয়েছে। সুতরাং এখানে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, “দাহাহা” শব্দ দিয়ে পৃথিবীর আকৃতি সমতল বুঝানো হয়নি।
তাফসিরে আহসানুল বয়ানে এই আয়াতের ব্যখ্যায় বলেছে,
সমতল ও বিস্তিত করার মানে হল, পৃথিবীকে সৃষ্টির বাসোপযোগী করার জন্য যে সমস্ত জিনিসের প্রয়োজন আল্লাহ তার প্রতি গুরুত্ব দিলেন। যেমন, জমিন থেকে পানি নির্গত করলেন অতঃপর তা হতে নানা খাদ্যসামগ্রী উৎপন্ন করলেন। পাহাড়সমূহকে পেরেকস্বরূপ মজবুতভাবে জমিনে গেড়ে দিলেন যাতে জমিনটা না হিলে।
রেফারেন্সঃ https://quran.com/79:30/tafsirs/bn-tafsir-ahsanul-bayaan
“ জমিনকে বিস্তীর্ণ করেছে ”বলতে বুঝানো হয়েছে যে ,জমিনকে আমাদের বসবাসের উপযোগী করা হয়েছে। সুতরাং এখানে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, “দাহাহা” শব্দ দিয়ে পৃথিবীর আকৃতি সমতল বুঝানো হয়নি।
তাফসিরে আহসানুল বয়ানে এই আয়াতের ব্যখ্যায় বলেছে,
সমতল ও বিস্তিত করার মানে হল, পৃথিবীকে সৃষ্টির বাসোপযোগী করার জন্য যে সমস্ত জিনিসের প্রয়োজন আল্লাহ তার প্রতি গুরুত্ব দিলেন। যেমন, জমিন থেকে পানি নির্গত করলেন অতঃপর তা হতে নানা খাদ্যসামগ্রী উৎপন্ন করলেন। পাহাড়সমূহকে পেরেকস্বরূপ মজবুতভাবে জমিনে গেড়ে দিলেন যাতে জমিনটা না হিলে।
রেফারেন্সঃ https://quran.com/79:30/tafsirs/bn-tafsir-ahsanul-bayaan
তবে আধুনিক তাফসিরগুলুতে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছে , দাহাহা( دَحٰٮهَا ) শব্দের অর্থ ডিম্বাকৃতি ।
যেমনঃ
Rashad Khalifa তার অনুবাদে লিখেছে, He made the earth egg shape.
রেফারেন্সঃhttps://www.islamawakened.com/quran/79/st33.htm#30
যেমনঃ
Rashad Khalifa তার অনুবাদে লিখেছে, He made the earth egg shape.
রেফারেন্সঃhttps://www.islamawakened.com/quran/79/st33.htm#30
Dr.Kamal Omar তার অনুবাদে লিখেছে, And the earth,after this stage, He gave it an oval form.
রেফারেন্সঃ https://www.islamawakened.com/quran/79/st48.htm#30
Sayed Vickar Ahamed তার অনুবাদে লিখেছে, He has extended the earth(far and wide also in the shape of an egg)
রেফারেন্সঃ https://www.islamawakened.com/quran/79/st28.htm#30
রেফারেন্সঃ https://www.islamawakened.com/quran/79/st28.htm#30
ভূগোলবিদ ও পৃথিবীর প্রথম মানচিত্র অংকনকারী আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ আল ইদ্রিসি পৃথিবীকে গোলাকার বলেছেন।
এছাড়া, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ইমাম ইবনে জাওযী ,ইবনে তাইমিয়া সহ অনেক বিখ্যাত স্কলার এই আয়াতের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছে পৃথিবী গোলাকার।
এছাড়া, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ইমাম ইবনে জাওযী ,ইবনে তাইমিয়া সহ অনেক বিখ্যাত স্কলার এই আয়াতের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছে পৃথিবী গোলাকার।
আরবি ভাষাতে একটা শব্দের অনেকগুলা অর্থ রয়েছে।
আমাদের বাংলা ভাষা ও ইংরেজি ভাষাতেও একই শব্দের আলাদা আলাদা অর্থ আছে।
যেমনঃ “উত্তর” দিক থেকে বাতাস এসেছে ।”
এখানে দুইটা বাক্যে “উত্তর” শব্দটি আছে। কিন্তু শব্দের অবস্থান অনুযায়ী দুইটা শব্দ আলাদা আলাদা অর্থ প্রকাশ করেছে।
আবার ইংরেজিতে,
“The doctors said she had only six months to live” & “The match will be televised live.”
এখানে “ live “ শব্দটি দুইটা ব্যাকে আছে, তবে অবস্থান অনুযায়ী আলাদা আলাদা অর্থ প্রকাশ করেছে।
এখানে “ live “ শব্দটি দুইটা ব্যাকে আছে, তবে অবস্থান অনুযায়ী আলাদা আলাদা অর্থ প্রকাশ করেছে।
আরবিতে দাহাহা শব্দের অর্থ কি ?
দাহাহা শব্দের অনেক গুলো অর্থ আছে।
যার মধ্যে রয়েছে ,বিস্তিত, প্রসারিত ,ডিমের আকারের,সম্প্রসারিত,ছড়িয়ে পড়া,বৃত্তাকার তৈরি,সুষম।
রেফারেন্সঃ https://www.wordsense.eu/%D8%AF%D8%AD%D8%A7%D9%87%D8%A7/
যার মধ্যে রয়েছে ,বিস্তিত, প্রসারিত ,ডিমের আকারের,সম্প্রসারিত,ছড়িয়ে পড়া,বৃত্তাকার তৈরি,সুষম।
রেফারেন্সঃ https://www.wordsense.eu/%D8%AF%D8%AD%D8%A7%D9%87%D8%A7/
পবিত্র কোরআনে “দাহাহা” শব্দটি একবার ব্যাবহার করা হয়েছে। যেখানে অর্থ করা হয়েছে “ ছড়ানো” ।
“ছড়ানো” শব্দটি কোরআনে আরো অনেক স্থানে ব্যাবহার করা হয়েছে।
“ছড়ানো” শব্দটি কোরআনে আরো অনেক স্থানে ব্যাবহার করা হয়েছে।
যেমনঃ সুরা জুমার ৬২ নং সূরা ১০ নং আয়াতে “ফান্তাসিরু” শব্দটি দিয়ে “ছড়ানো” বুঝানো হয়েছে।
এই আয়াতে “ছড়ানো” শব্দটি আরবি “দাহাহা” শব্দ দিয়ে বুঝানো হয়নি। বরং এখানে “ফান্তাসিরু” শব্দ দিয়ে বুঝানো হয়েছে।
এই আয়াতে “ছড়ানো” শব্দটি আরবি “দাহাহা” শব্দ দিয়ে বুঝানো হয়নি। বরং এখানে “ফান্তাসিরু” শব্দ দিয়ে বুঝানো হয়েছে।
আমি বিভিন্ন স্কলারদের ব্যাখ্যা শুনেছি সেখানে তারা বলেছে, অতঃপর তিনি জমিনকে বিস্তীর্ণ করেছেন।
এখানে অতঃপর শব্দটি আছে ,তার মানে পৃথিবী কোনো আকৃতিতে ছিলোনা, কোনো কিছুর অস্তিত্ব ছিলনা। (২৭-৩২ নং আয়াত পড়লেই বুঝা যাবে ) ফলে আল্লাহ পৃথিবীকে নতুন আকৃতিতে রূপান্তরিত করেছেন।অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে এনেছে ।
উট পাখি তার ডিমের জন্য মাটিকে প্রস্তুত করে, উর্বর করে ,এই অবস্থা কে “দাহাহা” বলে। তেমনি আল্লাহ ডিম আকৃতির জন্য পৃথিবীকে প্রস্তুত করছে এই অবস্থা কে “দাহাহা” বলেছে।
আগেরকার সময়ে যেহেতু মানুষের পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে তেমন ধারনা ছিলোনা ,এবং “দাহাহা” শব্দের অর্থ ডিম্বাকৃত অথবা প্রসারিত করা, দুইটাই সঠিক তাই আগেরকার তাফসিরসমূহে দাহাহা শব্দের অনুবাদ করেছে “প্রসারিত করা বা বিছিয়ে দেওয়া”।
এখানে অতঃপর শব্দটি আছে ,তার মানে পৃথিবী কোনো আকৃতিতে ছিলোনা, কোনো কিছুর অস্তিত্ব ছিলনা। (২৭-৩২ নং আয়াত পড়লেই বুঝা যাবে ) ফলে আল্লাহ পৃথিবীকে নতুন আকৃতিতে রূপান্তরিত করেছেন।অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে এনেছে ।
উট পাখি তার ডিমের জন্য মাটিকে প্রস্তুত করে, উর্বর করে ,এই অবস্থা কে “দাহাহা” বলে। তেমনি আল্লাহ ডিম আকৃতির জন্য পৃথিবীকে প্রস্তুত করছে এই অবস্থা কে “দাহাহা” বলেছে।
আগেরকার সময়ে যেহেতু মানুষের পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে তেমন ধারনা ছিলোনা ,এবং “দাহাহা” শব্দের অর্থ ডিম্বাকৃত অথবা প্রসারিত করা, দুইটাই সঠিক তাই আগেরকার তাফসিরসমূহে দাহাহা শব্দের অনুবাদ করেছে “প্রসারিত করা বা বিছিয়ে দেওয়া”।
আগেরকার তাফসীর গুলো কি ভুল ব্যাখ্যা করছে ?
উত্তরঃ না।
কেননা দুইটা ব্যাখ্যা সঠিক ।
And after that He spread the earth . & He made the earth egg shape.
earth শব্দের অর্থ , পৃথিবী ,মাটি, ভূমি , জমি ইত্যাদি ।
রেফারেন্সঃ https://translate.google.com/?sl=en&tl=bn&text=earth%20...
কেননা দুইটা ব্যাখ্যা সঠিক ।
And after that He spread the earth . & He made the earth egg shape.
earth শব্দের অর্থ , পৃথিবী ,মাটি, ভূমি , জমি ইত্যাদি ।
রেফারেন্সঃ https://translate.google.com/?sl=en&tl=bn&text=earth%20...
এখানে “Spread” শব্দটাই ঠিক করে দিবে যে “earth” মানে কি “জমিন” বুঝানো হয়েছে নাকি “পৃথিবী” বুঝানো হয়েছে।
যদি কেউ “earth” অর্থ “জমিন” ধরে নেই তাহলে “Spread” অর্থ হবে “বিস্তীর্ণ”। ফলে এই আয়াতের অর্থ হবে, এরপর আল্লাহ জমিনকে বিস্তীর্ণ করেছেন।আমাদের বসবাসের জন্য।
যদি কেউ “earth” অর্থ “পৃথিবী” ধরে নেই তাহলে “Spread” অর্থ হবে “ডিম্বা আকৃতি”।
ফলে এই আয়াতের অর্থ আসবে , এরপর আল্লাহ পৃথিবীকে ডিম্বাকৃতি করেছেন ।
যদি কেউ “earth” অর্থ “জমিন” ধরে নেই তাহলে “Spread” অর্থ হবে “বিস্তীর্ণ”। ফলে এই আয়াতের অর্থ হবে, এরপর আল্লাহ জমিনকে বিস্তীর্ণ করেছেন।আমাদের বসবাসের জন্য।
যদি কেউ “earth” অর্থ “পৃথিবী” ধরে নেই তাহলে “Spread” অর্থ হবে “ডিম্বা আকৃতি”।
ফলে এই আয়াতের অর্থ আসবে , এরপর আল্লাহ পৃথিবীকে ডিম্বাকৃতি করেছেন ।
আল্লাহ যেমন পৃথিবীর আকৃতি কে করেছে গোলাকার তেমনি আল্লাহ জমিনকে বিস্তীর্ণ করেছেন ।
রেফারেন্সঃ তিনি রাত্রি দ্বারা দিনকে আচ্ছাদিত করেন এবং রাত্রিকে আচ্ছাদিত করেন দিন দ্বারা।” (সূরা আয-যুমার ৩৯:৫)
রেফারেন্সঃ তিনি রাত্রি দ্বারা দিনকে আচ্ছাদিত করেন এবং রাত্রিকে আচ্ছাদিত করেন দিন দ্বারা।” (সূরা আয-যুমার ৩৯:৫)
তেমন জমিনকে বিস্তীর্ণ করেছেন আমাদের বসবাসের জন্য ।
রেফারেন্সঃ আমি ভূমিকে বিস্তৃত করেছি, তাতে পর্বতমালার ভার স্থাপন করেছি এবং তাতে সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ উদগত করেছি।” (৫০:৭)
কোরআন কি পৃথিবীকে সমতল বলে ? নাকি গোলাকার বলে ?
সূরা জুমার আয়াত নং ৫, আল্লাহ বলেন,
خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ بِالۡحَقِّ ۚ یُکَوِّرُ الَّیۡلَ عَلَی النَّهَارِ وَ یُکَوِّرُ النَّهَارَ عَلَی الَّیۡلِ وَ
سَخَّرَ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ ؕ کُلٌّ یَّجۡرِیۡ لِاَجَلٍ مُّسَمًّی ؕ اَلَا هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡغَفَّارُ ﴿۵﴾
তিনি যথাযথভাবে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাত দ্বারা দিনকে আচ্ছাদিত করেন এবং রাতকে আচ্ছাদিত করেন দিন দ্বারা। সূর্য ও চন্দ্রকে তিনি করেছেন নিয়মাধীন। প্রত্যেকেই পরিক্রমন করে এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত। জেনে রেখো, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।
خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ بِالۡحَقِّ ۚ یُکَوِّرُ الَّیۡلَ عَلَی النَّهَارِ وَ یُکَوِّرُ النَّهَارَ عَلَی الَّیۡلِ وَ
سَخَّرَ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ ؕ کُلٌّ یَّجۡرِیۡ لِاَجَلٍ مُّسَمًّی ؕ اَلَا هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡغَفَّارُ ﴿۵﴾
তিনি যথাযথভাবে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাত দ্বারা দিনকে আচ্ছাদিত করেন এবং রাতকে আচ্ছাদিত করেন দিন দ্বারা। সূর্য ও চন্দ্রকে তিনি করেছেন নিয়মাধীন। প্রত্যেকেই পরিক্রমন করে এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত। জেনে রেখো, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।
তাফসির,থেকে কিছু অংশ, আয়াতটিতে যে আরবি শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি হলো “يُكَوِّرُ”। এর অর্থ এক বস্তু কে অপর বস্তুর উপর পেচিয়ে দেওয়া। যেমনটা মাথার পাগড়ির ক্ষেত্রে বুঝানো হয়।আমরা ভালোভাবেই জানি, পাগড়ি কিভাবে গোলাকারভাবে প্যাঁচানো হয়।এই আয়াতে বলা হচ্ছে , রাত্রি আনয়ন করে দিনকে ঢেকে দিয়ে তার আলো শেষ করে দেওয়া এবং দিনকে রাত্রির পেঁচিয়ে বা জড়িয়ে দেওয়ার অর্থ হল, দিন আনয়ন করে রাত্রিকে ঢেকে দিয়ে তার অন্ধকার শেষ করে দেওয়া। এ ঘটনা কেবল পৃথিবী গোলাকার হলেই ঘটতে পারে।
এই আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে পৃথিবীর আকৃতি গোল ।