রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর মৃত্যু নিয়ে মুক্তমনা নাস্তিক ও অন্যান্য ইসলামবিরোধীদের অপপ্রচারের জবাব।
রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর মৃত্যু নিয়ে মুক্তমনা নাস্তিক ও অন্যান্য ইসলামবিরোধীদের অপপ্রচার এবং এর জবাব।
অভিযোগ নংঃ১
সহীহ বুখারীসহ বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী এক ইহুদি মহিলার দেয়া বিষের প্রতিক্রিয়ায় মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মৃত্যু হয়েছিল।
ইউনুস(র.) যুহরী ও ‘উরওয়াহ(র.) সুত্রে বলেন, আয়িশা(রা.) বলেছেন, নবী(ﷺ) যে রোগে ইন্তিকাল করেন সে সময় তিনি বলতেন, “হে ‘আয়িশা! আমি খাইবারে (বিষযুক্ত) খাবার খেয়েছিলাম আমি সর্বদা তার যন্ত্রণা অনুভব করছি ।আর এখন মনে হচ্ছে বিষক্রিয়ার ফলে আমার শিরাগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে।
রেফারেন্সঃ সহিহ বুখারি,হাদিস নং ৪৪২৮
মুহাম্মাদ(ﷺ) যদি সত্য নবি হয়ে থাকে তাহলে, একজন নবীকে কী করে কোন মানুষ হত্যা করতে পারে?
একজন নবীকে কিভাবে কোন মানুষ হত্যা করতে পারে?
নবী হলে হত্যা করা যাবেনা বা নবীদের কেউ হত্যা করতে পারবেনা এমন কোনো আয়াত কিন্তু কুরআনে নেই! এমন কোনো হাদীসও নেই। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যে আল্লাহর অনেক নবীকেই যুগে যুগে জালিমরা হত্যা করেছে। সেইসব নবীরা আল্লাহর পথে প্রাণ দিয়েছেন; তাঁরা শহীদ হয়েছেন।
কুরআনেও নবী রাসুলদের হত্যা করার ইঙ্গিত রয়েছে।
যেমনঃ
বল, যদি তোমরা বিশ্বাসী হতে তবে কেন তোমরা অতীতে নবীগণকে হত্যা করেছিলে?
রেফারেন্স; ( সূরা বাকারা; ২ঃ৯১ )
এ জন্য যে তারা আল্লাহর নিদর্শন সকলকে অমান্য করত এবং (প্রেরিত পুরুষ) নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত।
রেফারেন্স; ( সূরা বাকারা; ২ঃ৬১ )
তারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করত এবং অন্যায়রূপে নবীগণকে হত্যা করত।
রেফারেন্স; ( সূরা আলে ইমরান; ৩ঃ১১২ )
বাইবেলের পুরাতন নিয়ম(Old Testament) ও নতুন নিয়ম(New Testament) উভয় অংশে নবীদের শহীদ হবার অনেক প্রমাণ আছে। যেমনঃ
রাজা যখন তাদের সখরিয় [Zechariah/যাকারিয়া(আ.)]কে হত্যা করতে আদেশ দিলেন, তারা পাথর ছুঁড়ে মন্দির চত্বরেই তাঁকে হত্যা করলো।
রেফারেন্সঃ ( বংশাবলী২; ২৪ঃ১৯-২১ )
"আপনি নিশ্চয়ই জানেন, আমি কী করেছিলাম। ঈষেবল যখন প্রভুর ভাববাদী(নবী/prophet)দের হত্যা করছিলেন, আমি তখন তাদের ৫০ জন করে দুভাগে মোট ১০০ জন ভাববাদীকে দু’টো গুহায় লুকিয়ে রেখে নিয়মিত খাবার ও জল দিয়েছিলাম। ”
রেফারেন্সঃ ( রাজাবলী১; ১৮ঃ১৩ )
তোমার বেদী ধ্বংস করে ভাববাদী (নবী/prophet)দের হত্যা করেছে। এখন আমিই একমাত্র জীবিত ভাববাদী আর তাই ওরা আমাকেও হত্যার চেষ্টা করছে।”
রেফারেন্সঃ:( রাজাবলী১; ১৯ঃ৯-১০ )
তারা তোমার ভাববাদী(নবী/prophet)দেরও হত্যা করল, যারা তাদের সতর্ক করে তোমার কাছে ফেরাতে চেয়েছিল। কিন্তু আমাদের পূর্বপুরুষরা তোমার বিরুদ্ধে বীভত্স সব কাজ করলো। "
রেফারেন্সঃ ( নহিমিয়(Nehemiah) ৯:২৬ )
তিনি লোক পাঠিয়ে কারাগারের মধ্যে যোহনের [ইয়াহইয়া(আ.)] শিরশ্ছেদ করালেন।
রেফারেন্সঃ ( মথি(Matthew) ১৪ঃ১০ )
নির্দোষ হেবলের রক্তপাত থেকে শুরু করে বরখায়ার পুত্র সখরিয় [যাকারিয়া(আ.)/Zechariah], যাকে তোমরা মন্দিরের পবিত্র স্থান ও যজ্ঞবেদীর মাঝখানে হত্যা করেছিলে, সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত যত নির্দোষ ব্যক্তির রক্ত মাটিতে ঝরে পড়েছে, সেই সমস্তের দায় তোমাদের ওপরে পড়বে। আমি তোমাদের সত্যি বলছি, এই যুগের লোকদের ওপর ঐ সবের শাস্তি এসে পড়বে।’ ‘হায় জেরুশালেম, জেরুশালেম! তুমি, তুমিই ভাববাদীদের [নবী/prophet] হত্যা করে থাকো, আর তোমার কাছে ঈশ্বর যাদের পাঠান তাদের পাথর মেরে থাকো।
রেফারেন্সঃ ( মথি(Matthew) ২৩ঃ৩৫-৩৭ )
ইহুদি ও খ্রিষ্টান উভয় বাইবেলের পুরাতন নিয়ম(Old Testament)টি কে তাদের ধর্ম গ্রন্থ হিসেবে মান্য করে। এবং বাইবেলের অনেক জায়গাতে নবী-রাসুলদের হত্যার কথা উল্লেখ আছে। সুতরাং ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা যদি বলে কাউকে হত্যা করলে (শহীদ) সে নবী হতে পারবেনা তাহলে তাদের অনেক নবী মিথ্যা হয়ে যায়।
ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা যদি মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলে তাঁর নবুয়ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এই হচ্ছে তাদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড।
এবার আসা যাক বিষপানের সেই ঘটনা নিয়ে।
বিষপানের ঘটনা থেকে স্পষ্ট বুজা যায় মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মৃত্যু কিন্তু বিষ মেশানো মাংশ খেয়ে হয়নি। এবং ঘটনার বিবরণ লক্ষ্য করলে তাঁর নবুয়তের সত্যতা আরো বেশি করে ফুটে ওঠে।
রাসুল(সঃ) এর কাছে বিষ খাবার পাঠানো হয়েছিল খাইবারের যুদ্ধের সময়।
খাইবারের যুদ্ধ হয়েছিল ৬ষষ্ঠ হিজরিতে।
আর রাসুল (সাঃ) ১০ম হিজরিতে মারা যান ।
সুতরাং এই কথাটি বোধগম্যের বাইরে যে , বিষ পানের ৪ বছর পর কি ভাবে একজন মানুষ বেঁচে থাকতে পারে !
কুতায়বা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খায়বার যখন বিজয় হয়, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হাদীয়া স্বরুপ একটি (ভুনা) বকরী প্রেরিত হয়। এর মধ্যে ছিল বিষ। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এখানে যত ইয়াহুদী আছে আমার কাছে তাদের জমায়েত কর। তার কাছে সবাইকে জমায়েত করা হলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সন্মোধন করে বললেনঃ আমি তোমাদের নিকট একটি বিষয়ে জানতে চাই, তোমরা কি সে বিষয়ে আমাকে সত্য কথা বলবে? তারা বললোঃ হ্যাঁ, হে আবূল কাসিম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের পিতা কে? তারা বললো আমাদের পিতা অমুক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা মিথ্যে বলেছ বরং তোমাদের পিতা অমুক। তারা বললোঃ আপনি সত্য বলেছেন ও সঠিক বলেছেন।
এরপর তিনি বললেনঃ আমি যদি তোমাদের নিকট আর একটি প্রশ্ন করি, তা হলে কি তোমরা সে ব্যাপারে আমাকে সত্য কথা বলবে? তারা বললো হ্যাঁ, হে আবূল কাসিম যদি আমরা মিথ্যে বলি তবে তো আপনি আমাদের মিথ্যা জেনে ফেলবেন, যেমনিভাবে জেনেছেন আমাদের পিতার ব্যাপারে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেনঃ জাহান্নামী কারা? তারা বললো আমরা সেখানে অল্প দিনের জন্য থাকবে। তারপর আপনারা আমাদের স্থনাভিষিক্ত হবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরাই সেখানে লাঞ্চিত হয়ে থাকো। আল্লাহর কসম! আমরা কখনও সেখানে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত হবো না।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বলেন আমি যদি তোমাদের কাছে আর একটি বিষয়ে প্রশ্ন করি, তবে কি তোমরা সে ব্যাপারে আমার কাছে সত্য কথা বলবে? তারা বললো হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন তোমরা কি এ বকরীর মধ্যে বিষ মিশ্রিত করেছ? তারা বললঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ কিসে তোমাদের এ কাজে উদ্ভুদ্ধ করেছে? তারা বললো। আমরা চেয়েছি, যদি আপনি (নবুওয়াতের দাবীতে) মিথ্যাবাদী হন, তবে আমরা আপনার থেকে মুক্তি পেয়ে যাব। আর যদি আপনি (সত্য) নবী হন, তবে এ বিষ আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
রেফারেন্সঃ ( সহিহ বুখারি; ৫৩৬২ ) এবং (সুনানে আবু দাউদঃ ৪৫১০)
এই হাদীস থেকে প্রমাণ হয়ে যায় যে, রাসুল (সঃ) বিষ প্রয়োগের ঘটনা আগে থেকেই জানতেন।
বকরীতে বিষ মেশানোর দিন মুহাম্মাদ(ﷺ) ঘটনাস্থলেই সকল ইহুদিকে ডেকে অলৌকিক ভাবে তাঁদের পিতার নাম সঠিকভাবে বলে দিয়েছিলেন। এমনকি ইহুদিরাও স্বীকার করছিল যে তারা যদি মিথ্যা বলে তবে মুহাম্মাদ(ﷺ) তা আল্লাহর সাহায্যে বুঝে যাবেন। অর্থাৎ তাঁর নবুয়তের সত্যতা তাদের সামনেও ফুটে উঠেছিল।
মুহাম্মাদ(ﷺ) এর নবুয়ত নিয়ে সন্দিহান ছিল বলে তারা বিষ প্রয়োগ করে এর ‘পরীক্ষা’ নিতে চাইছিল। আল্লাহর ইচ্ছায় নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) তাদের এ সন্দেহও দূর করে দিয়ে এসেছিলেন। যারা তাঁকে বিষ খাইয়ে মারতে চাইলো, তাঁদেরকেই ডেকে এভাবে সন্দেহ নিরসন করে দিলেন এবং কোন প্রকার শাস্তি দিলেন না। সুবহানাল্লাহ। অথচ এই মানুষটিকেই ইসলামবিদ্বেষীরা নির্দয়, নিষ্ঠুর হিসাবে চিত্রিত করতে চায়।
উক্ত হাদিস থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে রাসুল সঃ বিষ মেশানোর কথা আগে থেকেই জানতো,এবং রাসুলুল্লাহ সঃ এর ওই বিষ পানে কিছুই হয়নি।
এবং এই ঘটনাতে মুহাম্মাদ(ﷺ) যে সত্য নবী তা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) কি আল্লাহর শাস্তির কারণে মৃত্যুবরণ করেছিলেন?
( এই অংশটি response-to-anti-islam থেকে নেওয়া হয়েছে। লেখকঃ মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার
এ প্রসঙ্গে আল কুরআনের যে আয়াতগুলো ইসলামবিরোধীরা উদ্ধৃত করে থাকে সেগুলো হচ্ছেঃ
وَلَوۡ تَقَوَّلَ عَلَيۡنَا بَعۡضَ ٱلۡأَقَاوِيلِ (٤٤) لَأَخَذۡنَا مِنۡهُ بِٱلۡيَمِينِ (٤٥) ثُمَّ لَقَطَعۡنَا مِنۡهُ ٱلۡوَتِينَ (٤٦)
অর্থঃ “যদি সে [মুহাম্মাদ(ﷺ)] নিজে কোন কথা বানিয়ে আমার কথা বলে চালিয়ে দিতো, তবে অবশ্যই আমি তাঁর ডান হাত ধরে ফেলতাম, এবং কেটে দিতাম তাঁর জীবন-ধমনী(শাহরগ)।”
আল কুরআন, হাক্কাহ ৬৯:৪০-৫২
এখানে বলা হচ্ছে যে, মুহাম্মাদ(ﷺ) যদি আল্লাহর নামে নিজে থেকে কোন কথা রচনা করতেন, তাহলে আল্লাহ তাঁর ‘ওয়াতিন’(الْوَتِينَ) বা জীবন-ধমনী কেটে দিতেন। এখানে মূল আরবিতে الْوَتِينَ শব্দটি এসেছে।
কয়েকটি ইংরেজি অনুবাদে [যেমনঃ আহমেদ আলী, হাবিব শাকির, সহীহ ইন্টারন্যাশনাল] দেখা যাচ্ছে যে, الْوَتِينَ এর অনুবাদ করা হয়েছে ‘Aorta’। বুখারীর কিছু ইংরেজি অনুবাদেও দেখা যাচ্ছে যে বিষ প্রয়োগের ফলে রাসুল(ﷺ) এর মনে হচ্ছিল যে তাঁর aorta কেটে যাচ্ছে। এই ইংরেজি অনুবাদগুলো দেখিয়ে ইসলামবিরোধীরা প্রমাণের চেষ্টা করে যে রাসুল(ﷺ) এর উপর আল্লাহ শাস্তি বাস্তবায়ন করেছেন (নাউযুবিল্লাহ)।
কিন্তু ইসলামবিরোধীদের এই অভিযোগের পেছনে কিছু শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। যে হাদিসটিতে রাসুল(ﷺ) এর মৃত্যুযন্ত্রনার উল্লেখ আছে, তার আরবি ইবারত আমি ইতিমধ্যেই উল্লেখ করেছি। সেখানে মূল আরবি ইবারতে বর্ণনা করা হয়েছে যেঃ রাসুল(ﷺ) এর মনে হচ্ছিল যে তাঁর ‘আবহার’ (أَبْهَرِ) কেটে ফেলা হচ্ছে [[فَهَذَا أَوَانُ وَجَدْتُ انْقِطَاعَ أَبْهَرِي مِنْ ذَلِكَ السَّمِّ ]] । সুরা হাক্কাহ এর আয়াতটিতে বলা হচ্ছে যে মুহাম্মাদ(ﷺ) যদি আল্লাহর নামে নিজে থেকে কোন কথা রচনা করতেন, তাহলে আল্লাহ তাঁর ‘ওয়াতিন’(الْوَتِينَ) বা জীবন-ধমনী কেটে দিতেন।
অর্থাৎ আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে, কোন কোন অনুবাদে এক শব্দ থাকলেও মূল আরবিতে ভিন্ন ভিন্ন শব্দ আছে। আমরা আরো দেখলাম ‘আবহার’ ও ‘ওয়াতিন’ মোটেও এক জিনিস নয়। মুহাম্মাদ(ﷺ) যদি আল্লাহর নামে মিথ্যা রচনা করতেন (নাউযুবিল্লাহ), তাহলে আল্লাহ শাস্তিস্বরূপ তাঁর ডান হাত ধরে ‘ওয়াতিন’ কেটে দিতেন। আর বিষের যন্ত্রণায় মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মনে হয়েছে যে তাঁর ‘আবহার’ কেটে ফেলা হচ্ছে।
তা ছাড়া আল্লাহর নামে মিথ্যা রচনা করলে শাস্তি হিসাবে ডান হাত ধরে ‘ওয়াতিন’ কেটে দেবার কথা বলা আছে ; অথচ রাসুল(ﷺ) মৃত্যুর আগে বিষের কারণে কষ্ট হয়েছে। কেউ তাঁর ডান হাত ধরে ‘ওয়াতিন’ কেটে যবাই করে ফেলেনি। উভয় ঘটনায় বিশাল তফাত রয়েছে।
যেহেতু ইংরেজি বুখারীর অনুবাদেও aorta ব্যবহার করা হয়েছে এ কারণে ইসলামবিরোধী প্রচারকরা বেছে বেছে কুরআনের কিছু অনুবাদ দেখায় যেগুলোতে aorta শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ আমরা দেখেছি যে মূল আরবিতে ভিন্ন ভিন্ন শব্দ আছে। ইতিমধ্যেই দেখানো হয়েছে যে বাংলা অনুবাদগুলোর অনেকগুলোতেই বুখারীর হাদিসটিতে ‘আবহার’ (أَبْهَرِ) এর অনুবাদ ‘শিরা’ দিয়ে করা হয়েছে। রাসুল(ﷺ) এর সুবিখ্যাত জীবনীগ্রন্থ ‘আর রাহিকুল মাখতুম’ এর বাংলা অনুবাদেও আলোচ্য ঘটনায় ‘আবহার’ (أَبْهَرِ) এর অনুবাদ ‘শিরা’ দিয়ে করা হয়েছে। [18] কাজেই এখানে বাংলা অনুবাদ দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা কিছুটা শক্ত কাজ। অতএব এখানে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য ইসলামবিরোধীদের কেবলমাত্র বেছে বেছে কিছু ইংরেজি অনুবাদ ব্যবহার করতে হয়।
ইসলামবিরোধীরা যদি এরপরেও অপতর্ক করে বলতে চায় –না না, ‘ওয়াতিন’(الْوَتِينَ) এবং ‘আবহার’ (أَبْهَرِ) উভয়ই এক জিনিস; কোন কোন অনুবাদক তো উভয়কে ‘aorta’ দিয়ে অনুবাদ করেছেন!! – তাহলে আমি এইসব তর্কপ্রিয় লোকদেরকে আরবি ভাষাবিদদের মতামত দেখতে বলব।
প্রসিদ্ধ আরবি ভাষাবিদ আল মুরতাজা আয-যাবীদী তাঁর ৪০ খণ্ডে রচিত ‘তাজুল আরুস’ গ্রন্থের ১০ নাম্বার খণ্ডের ২৬৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেন- -
”الأَبْهَرُ عِرْقٌ مَنْشَؤُه مِن الرَّأْس، ويَمْتَدُّ إِلى القَدمِ، وَله شَاريِينُ تتَّصِلُ بأَكثرِ الأَطرافِ والبَدَنِ، فَالَّذِي فِي الرأْس منهُ يُسَمَّى النَّأْمَة ويَمتدُّ إِلى الحَلْق فيُسَمَّى فِيهِ الوَرِيدَ، ويمتدُّ إِلى الصَّدْر فيُسَمَّى الأَبْهَرَ، ويمتدُّ إِلى الظَّهْر فيُسَمَّى الوَتِينَ، والفُؤادُ معلَّقٌ بِهِ، ويمتدُّ إِلى الفَخِذ فيُسَمَّى النَّسَا، ويمتدُّ إِلى السّاق فيُسَمَّى الصّافِنَ [تاج العروس (10/ 263)]
অর্থঃ “ ‘আবহার’ মাথা থেকে পা পর্যন্ত বিস্তৃত একটি রগ। যার কিছু শিরা-উপশিরা আছে, যা পুরো শরীরের অধিকাংশ অঙ্গ-প্রতঙ্গে বিস্তৃত। মাথার শিরাকে বলা হয় ‘না’মাহ্’, কণ্ঠনালীর শিরাকে বলা হয় ‘ওয়ারিদ’, বুকের শিরাকে বলা হয় ‘আবহার’, পিঠের শিরাকে বলা হয় ‘ওয়াতিন’, তার সাথেই হৃদপিণ্ডের সম্পর্ক, রানের শিরাকে বলা হয় ‘নাসা’ আর পায়ের নলার শিরাকে বলে ‘সাফিন’। ”
‘আবহার’ (أَبْهَرِ) ও ‘ওয়াতিন’(الْوَتِينَ) এর ভিন্নতা
হৃদপিন্ড থেকে উৎপত্তি লাভ করে যে ধমনী উপরের দিকে ওঠে এবং বুকে অবস্থান করে তাকে 'আবহার' বলে। আবার সেই ধমনী যখন পিছনের দিকে গিয়ে নীচের দিকে নামে তখন তাকে 'ওয়াতিন' বলে। এই ধমনী থেকে যখন কিছু শাখা-প্রশাখা গলায় চলে যায় তখন তাকে 'ওয়ারিদ' বলে।
এটা খুবই সুস্পষ্ট ব্যাপার যে, ‘ওয়াতিন’(الْوَتِينَ) এবং ‘আবহার’ (أَبْهَرِ) মোটেও এক জিনিস নয় এবং গত দেড় হাজার বছরে সুরা হাক্কাহ পড়ে এরপর সহীহ বুখারী ও অন্যান্য হাদিস গ্রন্থ থেকে রাসুল(ﷺ) এর বিষের যন্ত্রণার বিবরণ দেখে কোন আরব এটা বোঝেনি যে আল্লাহ ঘোষিত শাস্তির দ্বারা এটা হয়েছে। দেড় হাজার বছর পরে কিছু খ্রিষ্টান মিশনারী এবং ইসলামবিদ্বেষী একটিভিস্ট ধূর্ততার সাথে কিছু অনুবাদ ব্যবহার করে রাসুল(ﷺ) এর মৃত্যুকে ‘আল্লাহর আযাব’ বানিয়ে ফেলার যে অপচেষ্টা করেছে, তা কখনোই সফল হবার নয়। আল্লাহ এদের অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের নিপাত করুন এবং এদেরকে হেদায়েত দিন।